জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’ হরণের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। কালীপূজার অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে এবং ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মন্দির স্থাপনের দাবিতে তারা বৃহস্পতিবার দুপুরে শান্ত চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। পরে প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পূজা উদযাপনের অনুমতি না দিয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে এবং একাধিকবার অবমাননাকর মন্তব্য করেছে।
সমাবেশে সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সভাপতি সুমন কুমার দাস বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমরা কেন্দ্রীয় মন্দির স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু প্রতি বছরই প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে। কালীপূজার অনুমতি না দিয়ে প্রশাসন বলছে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। যদি নিরাপত্তা দিতে না পারেন, তাহলে গদি ছাড়ুন। নিরাপত্তা দেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব এটি অনুগ্রহ নয়।”
সনাতন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ এবং ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, “কোন ধর্মে বিশ্বাস করবে বা করবে না—তা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত অধিকার। প্রশাসনের সেই অধিকার নেই। আজ যারা পূজার অনুমতি দিচ্ছে না, তারাই বৈষম্যের রাজনীতি করছে। ধর্মের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব।”
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব কিশোয়ার আনজুম সাম্য বলেন, “এই বাংলা যতটা হিন্দুর, ততটাই মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানেরও। ধর্মীয় সম্প্রীতির এই ঐতিহ্যে বিভাজনের রাজনীতি চলবে না। আমরা বলছি এই জগন্নাথে মন্দির হবে, পূজাও হবে।” সতয় সনাতন টিভি
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি তার ধর্ম পালনের অধিকার রাখে। প্রশাসনের বিরূপ মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাই।”
নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি অর্ঘ্য শ্রেষ্ঠ রায় বলেন, “আজ আমরা যে স্মারকলিপি দিয়েছি, সেখানে সব ধর্মের ছাত্রনেতাদের স্বাক্ষর রয়েছে। এটি কেবল একটি দাবি নয়, একটি আলটিমেটাম। আমরা শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানাই, সন্তান হিসেবে আমাদের পাশে দাঁড়ান।” সত্য সনাতন টিভি
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন,
“শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আলোচনার সময় উত্তর ভারতে কালীপূজা উদযাপনের প্রসঙ্গ এসেছিল, যা তারা ভুলভাবে নিয়েছে। আমরা প্রথমে মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছিলাম, তবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও চাকসু নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় পরবর্তীতে অনুরোধ করি পূজাটি এবার না করার জন্য।”
বিক্ষুব্ধ হিন্দু শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়া ধর্মীয় স্বাধীনতার স্পষ্ট লঙ্ঘন। তারা কালীপূজার অনুমতির পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থায়ী কেন্দ্রীয় মন্দির প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। “সত্য সনাতন টিভি”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘নিরাপত্তাজনিত’ কারণ দেখিয়ে পূজার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। সংহতি জানানো ছাত্র সংগঠনগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে, “ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।” সত্য সনাতন টিভি।